ভোলা প্রতিবেদক ॥ ভোলার ইলিশা, দৌলতখান, হাকিমুদ্দিন, মঙ্গল সিকদার, চরফ্যাশন আয়শাবাদ ও বেতুয়া, মনপুরা ও হাতিয়া রুটে মেসার্স ফেরারী শিপিং লাইন্স লিমিটেডের তাসরিফ-১ ও তাসরিফ-৪ যাত্রীবাহি দুটির লঞ্চ চলাচলে সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলাচল ও পল্টুন ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগে এনে এ স্থাগিতাদেশ দেওয়া হয়। এতে চরম দূর্ভোগে পড়েছে দ্বীপ জেলা ভোলার নৌরুটে যাতায়াকারী যাত্রীরা। বিআইডব্লিউটিএ’র ভাষ্যমতে, গত ৩০ অক্টোবর তাসরিফ-১ লঞ্চটি ষাটনলের দশআনি নামক স্থানে মেসার্স ফারহান নেভিগেশন লিমিটেডের এমভি ফারহান-৪ লঞ্চটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এছাড়া ইলিশা ফেরিঘাট ক্ষতিগ্রস্ত করা ও সদর ঘাটের নির্ধারিত টার্মিনালে না ভিরে আগানগর খেয়াঘাটের পল্টুনে ভিড়ার সময় পল্টুনের ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ আনা হয় তাসরিফ-৪ লঞ্চের বিরুদ্ধে। মেসার্স ফেয়ারী শিপিং লাইন্স লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার ইকবাল হোসেন বরিশালক্রাইমট্রেস’কে জানান, দশআনি নামক স্থানে তাসরিফ-১ নয় বরং ফারহান-৪ লঞ্চটি তাসরিফ-১ লঞ্চটিকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে ক্ষতিসাধন করে। ওই ঘটনার বিবরণসহ গত ৯ নভেম্বর মেসার্স ফেরারী শিপিং লাইন্স লিমিটেড কর্তৃপক্ষ নৌ নিট্রা বিভাগে মেসার্স ফারহান নেভিগেশন লিমিটেডের দায়ের করা মিথ্যা অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা প্রদান করে। কিন্তু কোনো তদন্ত ছাড়াই রহস্যজনক কারণে তাসরিফ-১ লঞ্চ চলাচলে সাময়িক স্থাগিতাদেশ দেয়া হয়।
ফেয়ারী শিপিং লাইন্স কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, সদরঘাট টার্মিনালে পর্যাপ্ত লঞ্চ ও যাত্রী থাকায় বার্দিং করার সময় তাসরিফ-৪ লঞ্চটির ইঞ্জিন গিয়ার অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ায় আগানগর খেয়াঘাটের পল্টুনে আঘাত লাগে। এতে জানমালের কোন ক্ষতি হয়নি। পল্টুনের অল্প-স্বল্প ক্ষতি বিআইডব্লিউটিএ’র তদারকিতে নিজ খরচে মেরামত করার অঙ্গীকার করে ১৬ নভেম্বর আবেদন করা হয়। কিন্তু ওই আবেদন বিআইডব্লিউটিএ আমলে না নিয়ে, যাত্রী ও ইজারাদারদের স্বার্থ বিবেচনা না করে মেসার্স ফারহান নেভিগেশন লিমিটেডকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার জন্য তাসরিফ-১ ও ৪ লঞ্চ চলাচলে সাময়িকভাবে স্থগিতাদেশ দেয়। এসব রুটে চলাচলকারী যাত্রী জাকির হোসেন বাবুল, কাজী কামাল, মোঃ জামালসহ বেশ কয়েকজন যাত্রী জানান, এক সময় ফারহান কম্পানীর লঞ্চগুলো যাত্রীদের উপর জুলুম করতো। প্রতিযোগীতার বাজারে আরো লঞ্চ যুক্ত হওয়ায় সেবার মান বেড়েছে। এই রুটে তাসরিফ লঞ্চ চলাচল করার পর থেকে যাত্রীরা এক ধরনের নির্যাতন থেকে মুক্তি পেয়েছে। দৌলতখান ঘাটের ইজারাদার শফিউল্যাহ বরিশালক্রাইমট্রেস’কে জানান, ঘাটে তাঁর ৪৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। লাভ দূরে থাক চালান উঠানোই দায় হয়ে পড়েছে। ওই ঘাট দিয়ে এলাকার ৪’শ থেকে ৫’শ যাত্রী যাতায়াত করে। এখন তাঁরা বিকল্প পথে যাবে। ফলে লোকসান আরো বাড়বে। দৌলতখান রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী জামাল বরিশালক্রাইমট্রেস’কে জানান, একসময় এ রুটে একমাত্র ফরহান লঞ্চ চলাচল করতো। তখন যাত্রীসেবার মান ছিলনা। আরো কয়েকটি লঞ্চ আসায় যাত্রীসেবার মান বেড়েছে। কিন্তু লঞ্চ বন্ধ করা কোন যৌক্তিক সমাধান হতে পারেনা। এদিকে ওই দুটি লঞ্চ বন্ধ থাকায় করোনাকালে গাদাগাদি করে ঝুঁিক নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে এসব রুটের যাত্রীদের। এতে যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক মোঃ মিজান বরিশালক্রাইমট্রেস’কে বলেন, ‘সরকারি প্রজ্ঞাপনার ক্ষতিসাধন ও অনিয়ন্ত্রিত ঝুকিঁপূর্ণ চলাচলের কারণে ফেয়ারী শিপিং লাইন্স লিমিটেডের তাসরিফ-১ ও ৪ লঞ্চের চলাচলে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে।’
Leave a Reply